Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ফল চাষে সার ব্যবস্থাপনা

ফল চাষে সার ব্যবস্থাপনা

ড. নির্মল চন্দ্র শীল

 

মাত্র দুটি বর্ণ সমন্বয়ে গঠিত শব্দ ফল কিন্তু দেহের পুষ্টিসাধন ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি বিকাশ, রোগ নিরাময়, বিপাকীয় ক্রিয়াদি প্রতিপালনে এর গুরুত্ব অপরিসীম ও অতুলনীয়। দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও মিনারেলের সর্বোত্তম প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে ফল। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity power) বৃদ্ধিতে ফলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অধিকন্তু ফলে এন্থোসায়ানিন ও লাইকোপেন থাকাতে প্রাণঘাতি মরণব্যাধি ক্যান্সার ও করোনাসহ অন্যান্য রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।


দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বছরব্যাপী ফলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ এ আগাম ও  নাবী (Late) ফলের জাত উদ্ভবানের জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৬ প্রজাতির বিভিন্ন ফলের ৯২টি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে। ওই জাতগুলোর মধ্যে বেশ কিছু জাত বারোমাসী, নাবী, অমৌসুমী এবং খরা ও লবণাক্ততাসহিষ্ণু যা দেশের ফল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


নতুন বাগান স্থাপন, বসতবাড়ির আঙিনায় ও রাস্তার দুইধারে ফল গাছ রোপণের কর্মকাণ্ড উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। তাছাড়া আমাদের দেশে মৌসুমভিত্তিক ফলের প্রাপ্যতা বেশি; বছরের অন্যান্য সময়ে ফলের প্রাপ্যতা খুবই অপ্রতুল যেমন- মোট ফলের মধ্যে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১৯ শতাংশ, মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৬০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ শতাংশ উৎপাদিত হয়। বছরব্যাপী ফল উৎপাদন, পুষ্টিমান নিয়ন্ত্রণ, আকার-আকৃতি, স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ আকর্ষণীয়করণ ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফলচাষে সুষম সার ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ পানি সেচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


ফলগাছে সার প্রয়োগের নীতি
ফল গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আহরণ করে থাকে। গাছের বৃদ্ধি বিকাশ, ফুল-ফল ধারণ ও মানসম্মত ফল উৎপাদনে এবং বলশালী চারা/কলম প্রাপ্তির জন্য প্রতি বছর অন্তত দুবার মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সার প্রয়োগ আবশ্যক। নিম্নে ফল গাছে সার প্রয়োগের কতিপয় সাধারণ নীতিমালা উল্লেখ করা হলো।


ফল গাছে সাধারণত  বর্ষা মৌসুম শুরু হবার আগে মে-জুন মাসে ১ বার এবং বর্ষাকাল শেষ হবার পরে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আর একবার সার প্রয়োগ বিধেয়। গাছের ক্যানোপি এরিয়া যতদূর বিস্তৃত হয় অর্থাৎ গাছের ছায়া যে দূরত্ব পর্যন্ত  পৌঁছায় ওই দূরত্বে সারপ্রয়োগ করতে হবে কারণ গাছের জন্য খাদ্য শোষণকারী মূলসমূহ প্রধানত ওই দূরত্বে বিচরণ করে। ছোট গাছের বেলায় ওই দূরত্ব গাছের গোড়া থেকে চারিদিকে ০.৫-১ মিটার এবং বড়গাছের বেলায় ১-১.৫ মিটার হয়ে থাকে। ওই দূরত্বে গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটি আলতোভাবে কুপিয়ে কিংবা চারিদিকে ৫০ সেমি. গভীর গর্ত (Trench) তৈরি করে সার প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর গাছের চতুর্দিকে একটি আইল (band) তৈরি করে দিতে হবে যাতে সেচ ও বৃষ্টির পানি সার দ্রব্য ধুইয়ে অপচয় করতে না পারে। সাধারণত একবীজপত্রী উদ্ভিদের (নারিকেল, সুপারি, তাল ইত্যাদি) ক্ষেত্রে গর্ত পদ্ধতিতে এবং দ্বিবীজপত্রী (আম, কাঁঠাল, পেয়ারা ইত্যাদি) উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মাটি কুপিয়ে সার দ্রব্য ছিটিয়ে প্রয়োগ করা উত্তম। সার দ্রব্য প্রয়োগের পর মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে বা মাটি দ্বারা গর্ত ঢেকে দিতে হবে। অতঃপর হালকা সেচ প্রয়োগ বিধেয়। সার প্রয়োগের পর খড়/বিছালী ইত্যাদি দ্বারা জাবড়া (মালচিং) প্রয়োগ করতে হবে যাতে সার ও পানির কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। জিংক সার, ফসফেট সার ও জৈবসার একত্রে  মিশ্রিত করে প্রয়োগ করা যাবে না। সাধারণত রাসায়নিক সার প্রয়োগের সপ্তাহ খানেক আগে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। অতঃপর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (জিংক, বোরন ইত্যাদি) সার ব্যতীত অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে। কিছু ঝুর ঝুরে মাটির সাথে সুপারিশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার মিশিয়ে তা গর্তে বা ইতঃপূর্বে কোদাল দ্বারা কোপানো মাটিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। সার দ্রব্য কাচি পাতা, কাণ্ড কিংবা ভিজা পল্লবে যাতে কোনো প্রকারে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাহাড়ি এলাকায় ডিবলিং পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু ফলগাছে প্রতি বছর সার প্রয়োগ করা হয় তাই ফসফরাস, জিংক, সালফার ইত্যাদি পুষ্টি উপাদানের অবশেষ থেকে যেতে পারে। এমতাবস্থায় মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সারের মাত্রা নির্ধারণপূর্বক সার প্রয়োগ করতে হবে।

 

 


সার প্রয়োগের সময়
ফল গাছে বছরে কমপক্ষে ২ বার সার প্রয়োগ করতে হয়।  প্রধান প্রধান ফল গাছে সার প্রয়োগের সময়সূচি সারণি-১ দ্রষ্টব্য। সুপারিশ মোতাবেক সার প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।


সিঞ্চন পদ্ধতিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার প্রয়োগ বহুবর্ষজীবী ফলগাছে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (জিংক, বোরন, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম, কপার ইত্যাদি) সার সিঞ্চন পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা উত্তম। বাংলাদেশের ফলগাছে প্রধানত জিংক ও বোরন-এর অভাব পরিলক্ষিত হয়। সারণি-২ মোতাবেক সুপারিশ অনুযায়ী স্প্রে দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে।


প্রয়োগ পদ্ধতি
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার সুপারিশ মোতাবেক প্রধানত বছরে ২ বার স্প্রে করা যেতে পারে। একবার ফুল ধারণের পর (এপ্রিল-মে মাসে ফলগাছ ভেদে ভিন্ন হতে পারে) আর একবার ফল সংগ্রহের পর (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে)। প্রথম বার স্প্রে করার পর ১৫ দিন আর একটি স্প্রে দিতে হবে। তদ্রুপ, দ্বিতীয় বার স্প্রে করার পর ১৫ দিন পর আর একটি  স্প্রে দিতে হবে। সাধারণত ফল বাগানের জন্য হেক্টরপ্রতি ৩০০-৪০০ লিটার স্প্রে দ্রবণ প্রয়োজন হতে পারে।


স্প্রে করার নিয়ম
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার  স্প্রে করার পূর্বে উক্ত সারের অভাবজনিত লক্ষণ আছে কি না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
সাধারণত মাটিতে প্রয়োগ করা হয়ে থাকলে অভাব প্রকট নাও হতে পারে। পড়ন্ত বিকেলে যখন সূর্য্যের তেজ কমে যায় তখন গাছের পাতার নিচের দিকে  স্প্রে করতে হবে যেন পাতা ভিজে কিন্তু পাতা থেকে ফোঁটা ফোঁটা সার দ্রবণ ঝরে না পড়ে। দ্রবণ প্রস্তুত করার পূর্বে হিসেব সঠিক কি না তা যাচাই করে নিতে হবে। দ্রবণ স্প্রে করার পর অবশিষ্ট (যদি থাকে) ফেলে দিতে হবে কারণ স্প্রে দ্রবণ মজুদ (ঝঃড়ৎব) করা যাবে না।


মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাবজনিত কতিপয় লক্ষণ
বোরনের অভাব হলে পেঁপে, কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি ফলের আকার বিকৃত (উবভড়ৎসবফ) হয়। আম, লিচু প্রভৃতি ফলের ফুল, ফল ঝরে পড়ে, বাড়ন্ত লিচু ফেটে যেতে পারে। জিংকের অভাবে লেবু জাতীয় উদ্ভিদের পাতার মধ্য শিরা সবুজ থাকে কিন্তু শিরার মধ্যবর্তী অংশ সাদাটে হয়ে যায়। তীব্র ঘাটতিতে গাছের বৃদ্ধি থেমে যায় এবং পাতা ছোট হয়ে গুচ্ছ পাতা তৈরি করতে পারে। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গুণগতমান উন্নয়ন ও ফল সংগ্রহোত্তর জীবনকাল বৃদ্ধিতে সুষম সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ একান্ত আবশ্যক।

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন উইং, বিএআরআই, গাজীপুর; মোবাইল : ০১৭১৮২০১৪৯৯, ই-মেইল :: nirmal_shil@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon